রেজাউল হাবিব রেজা ঃ জনাব আবদুল গণি স্যার একজন প্রবীণ ও গুণী মানুষ। বিভিন্ন উচ্চবিদ্যালয়ে তিনি শিক্ষা কার্যক্রমে প্রধান শিক্ষক হিসেবে সুনামের সাথে ভুমিকা পালন করেছেন। বর্তমাানে গুরুদয়াল সরকারি কলেজের পাশের লিংক রোডে বসবাস করছেন।
গত ২৩ এপ্রিল বুধবার ছিল বই দিবস। কেহবা এ দিবসটিকে বই সংরক্ষণ দিবস হিসেবে পালন করে থাকেন। তিনি যখন শুনলেন গুরুদয়াল কলেজ সংলগ্ন শহীদ আশফাকুস সামাদ বীর উত্তম স্মৃতি গ্রন্থাগার, যার প্রতিষ্ঠাতা হারুয়া নিবাসী হাজী আবু সাঈদ এর প্রতিষ্ঠানে বিশ্ব বই দিবসের এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে, তখন শত ব্যস্ততা মাথায় রেখেও ছুটে চললেন ওই গ্রন্থাগারে। এই স্যার শহীদ আশফাকুস সামাদের পূর্ব ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞাত ছিলেন। তিনি নিজেও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি আলাপচারিতায় বলছিলেন আশফাকুস সামাদের দাদা আবদুস সামাদ ময়মনসিংহ জেলা হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তাছাড়া অবিভক্ত বাংলার শিক্ষা বিভাগের এডিপিআই ছিলেন। এসময় ড. কুদরত-ই-খুদা ছিলেন ডিপিআই। তিনি আরো বললেন, আবদুস সামাদ এমন একটি ইংলিস গ্রামার বই প্রণয়ন করেছিলেন যা অতিসহজ ও সরল সমীকরণে অদ্বিতীয়। তিনি বলেন, আমার ইংরেজি ভাষা চর্চার কারিশমা ওই বইয়ের জন্যই। ওনার সংগ্রহ করা ইংলিশ গ্রামারের বইটি আরেকজনকে পড়ার জন্য দেবার পর তা আর ফেরত পাননি বলে আক্ষেপ করেন। বই দিবসে এমন স্মৃতিচারণ সবাইকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে বলে মনে করি। নতুন ইতিহাস জানিয়ে আমাদেরকে এই স্যার মুগ্ধ করলেন। তিনি মাঝে মাঝে আবদুস সামাদের ছেলে সন্তানদের নিয়েও স্মৃতিচারণ করে থাকেন। কিশোরগঞ্জে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রয়াত আবদুস সামাদের সন্তানদের মধ্যে তার সুযোগ্য সন্তান প্রখ্যাত সাংবাদিক আতাউস সামাদকে নিয়েও তিনি সঙ্গীদের সাথে আলোচনা করেন। তাদেরই অধস্তন সিংহপুরুষ ৭১ এর রণাঙ্গণের শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা (বীর উত্তম) আশফাকুস সামাদ গ্রন্থাগারে বই দিবসের এক ফটোসেশন হবে শুনেই ছুটে এলেন আবু সাঈদ প্রতিষ্ঠিত গ্রন্থাগারে। ওনার পক্ষে ১০/১৫ মিনিট সময় দেওয়া খুবই কঠিন থাকলেও পূর্বপুরুষ আবদুস সামাদের বংশ মর্যাদা প্রদান করতেই তাদের নামের ওপর প্রতিষ্ঠিত গ্রন্থাগারে ছুটে এলেন এবং আবদুস সামাদকৃত ইংলিস বই নিয়ে স্মৃতিচারণ করলেন। আবদুস সামাদ ব্যাপারে আরো বললেন,তিনি ভারতের হুগলী, জলপাইগুড়ি, বঙ্গদেশের চাট গাঁ, সিলেট, ময়মনসিংহ সহ প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ের প্রধান হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন। তিনি তার ফুফাতু ভাই আবদুল লতিফ হাজী সাহেবের প্রতিষ্ঠিত হাত্রাপাড়া নিউস্কীম পদ্ধতির জুনিয়র মাদরাসার নিবন্ধনটিও করিয়ে দেন ১৯৩৬ সনে। কারন আবদুস সামাদের একমাত্র অভিভাবক ছিলেন হাজী আবদুল লতিফ। শিক্ষায়-দীক্ষায় হাজী আবদুল লতিফ একমাত্র ব্যক্তি এই অঞ্চলে ব্যাপক মশহুর ছিলেন। পরে শিক্ষাবিদ আবদুস সামাদকৃত নিবন্ধনের এই মাদরাসটি হাত্রাপাড়া জুনিয়র স্কুলে রূপান্তরিত হয়। এটিইবর্তমানে হাত্রাপাড়া হাই স্কুলে উন্নীত।
মূলতঃ আবদুস সামাদ শিক্ষা দ্যুতনায় কিশোরগঞ্জ জেলায় এক অবিভাজ্য নাম। তিনি বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার প্রথাম বিলাত পাশ শিক্ষাবিদ। তিনি কিশোরগঞ্জ রামানন্দ হাইস্কুল বর্তমানে কিশোরগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের বৃত্তি পাওয়া ছাত্র। বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলায় মেট্রিক পরীক্ষায় তিনি ৩য় হয়েছিলেন। পিছিয়ে থাকা মুসলিম ছাত্রদের মাঝে তিনি ছিলেন এক আলোকবর্তিকা স্বরূপ। তিনি মরহুম আবদুস সামাদের রচিত ইংলিস গ্রামার এর স্মৃতিচারণ করা বই দিবসের জন্য এক যথার্থ মূল্যায়ণ বলে মনে করি। তিন ছাড়া কিশোরগঞ্জের দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তি আজ বেঁচে নেই যে কিশোরগঞ্জের “সামাদ পরিবার” নিয়ে, তাদের ভুমিকা নিয়ে আলোচনা করবে। দেশ ও জাতির কল্যাণে নিবেদিত এই সামাদ পরিবারকে যখন শুধুমাত্র একটি পরিবারের সম্পদ মনে করা হয় তখনই আমরা ভুল করি। এ রকম ভুল বার বার করা হচ্ছে। অতীতে দেখা গেছে কোনো এক জাতীয় কর্ণধারকে একটি পরিবারের সম্পদ ভাবার কারণে তাদেরকে খেসারত দিতে হয়েছে। ওনারা হলেন দেশের জাতীয় সম্পদ। আজ জাতি তাদেরকে বেমালুম ভুলে গেছে। তাদের ত্যাগের ওপর প্রতিষ্ঠিত এই বাংলাদেশ। অথচ তারা ইতিহাসের বর্ননায় বর্তমানে অপরিচিত ও অবহেলিত। আজ হারুয়ার হাজী আবু সাঈদ কিশোরগঞ্জে একটি গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করায় সামাদ পরিবার নিয়ে কথা বলার সুযেগ হয়েছে। আর গণি স্যাররা বেঁচে আছেন বলেই এ বই দিবসে বই লেখা নিয়ে তিনি আলোচনা করতে পেরেছেন।
বই দিবসে এমন আলোচনা সব গ্রন্থাগারে হোক এটাই কামনা করি। শুধুমাত্র গুগলে সার্চ দিলেই কেবল বিশ্ব বই পড়া দিবস সম্পর্কে জানা যায়।
জাতি হিসেবে বইয়ের সংরক্ষণ,বই রচনা, অতীতের পুঁথি-পুস্তক যা লন্ডনের সম্ভান্ত লাইব্রেরিতে রক্ষিত আছে, তাতে প্রমাণিত হয় আমরা অতীতে সমৃদ্ধ ছিলাম। দিনে দিনে আমরা অসাহিত্যকে সাহিত্য বলে চাপিয়ে দেয়ার কারণে সাধারণ জনগণের মাঝে কোনো বই সংরক্ষণের আবেদন বাড়ায়না। যে বই বা বইয়ের আলোচনা আমাদেরকে বই সংগ্রহে প্রেরণা দেয় সেরকম বই-সাহিত্য ও আলোচনা নিত্যদিন অপরিহার্য। আজ বিশ্ব বই দিবস বাংলাদেশে নামে মাত্র চলছে। আমি যদি জাতীয় ভাবে দিবসটি পালন করার কথা না বলে শুধু কিশেরগঞ্জের কথাই বলি, তবে দেখা যাবে শুধু শহীদ লেফটেন্যান্ট আশফাকুস বীর উত্তম স্মৃতি গ্রন্থাগারে একমাত্র পালিত হয়েছে। তাও আবার ফটোসেশনের মাধ্যমে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া নিজ উদ্যোগে করলে যা হয়।
পরিশেষে বলতে চাই। আমার লেখায় কোনো ভ্রান্তি থাকলে আপনারা গঠনমূলকভাবে লিখতে পারেন। আজকের এই বিশ্ব বই দিবসে আমার প্রার্থনা, বেঁচে থাকুক বই নিয়ে প্রাণবন্ত আলোচক আবদুল গণি স্যার, বেঁচে থাকুক শহীদ লেফটেন্যান্ট আশফাকুস বীর উত্তম স্মৃতি গ্রন্থাগারটি, বেঁচে থাকুক এমন গ্রন্থাগারের প্রতিষ্ঠাতা হাজী আবু সাঈদ।