নিউজ ১৭ বিডি ডেস্ক ঃ কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ ১৯৮তম ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্টিত হয়েছে।
সোমবার ( ৩১ মার্চ ) সকাল ১০টায় দেশের ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহ কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ১৯৮তম পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এবারের ঈদের জামাতে মাঠের ভিতর ২ লক্ষাধিক মানুষ অংশ নেন। এ ছাড়া আশপাশের দুই কিলোমিটারের মধ্যে সব মিলিয়ে ছয় লাখের বেশি মানুষ নামাজে অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
নামাজ পড়তে আসা দেশ-বিদেশের কয়েক লাখ মুসল্লির ভিড়ে জনসমুদ্রে পরিণত হয় শোলাকিয়া ময়দান। আগত মুসল্লিদের অনেকে মাঠে জায়গা না পেয়ে পার্শ্ববর্তী রাস্তা, বাড়ির ছাদ, নদীর পাড় ও শোলাকিয়া সেতুতে জায়গা করে নিয়ে জামাতের জন্য দাঁড়িয়ে পড়েন।
নিরাপত্তার স্বার্থে সকাল ৭টার আগে মুসল্লিদের ঈদগাহে প্রবেশ করতে দেয়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সকাল ৭টার দিকে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে প্রত্যেক মুসল্লিকে তল্লাশি করে ঈদগাহে ঢুকতে দেয়। সকাল সাড়ে ৮টার দিকেই ৭ একর আয়তনের শোলাকিয়া মাঠ পূর্ণ হয়ে যায়।
সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত জামাতের ইমামতি করেন মুফতি আবুল খায়ের মুহাম্মদ ছাইফুল্লাহ। শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ২০০৯ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহের মুতাওয়াল্লি নিযুক্ত স্থায়ী ইমামকে বাদ দিয়ে ইমাম হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদকে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। দীর্ঘ ১৫ বছর পর ২০০৯ সালে বাদ দেওয়া কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদ জামাতের ইমাম মুফতি আবুল খায়ের মুহাম্মদ ছাইফুল্লাহকে পুনর্বহাল করা হয়।
১৭৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ঈদগাহের ঐতিহ্য অনুসারে মুসল্লিদের প্রস্তুতির জন্য জামাত শুরুর ৫ মিনিট আগে তিনটি শটগানের গুলি ছোড়া হয়। প্রতিবারের মতো এবারও শোলাকিয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাতে অংশ নিতে দূর-দূরান্ত থেকে ধর্মপ্রাণ মানুষ ছুটে আসেন। দেশের সর্ববৃহৎ এই জামাতে অংশ নিতে সকাল থেকে মুসল্লিদের ঢল নামে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত শোলাকিয়া ঈদগাহের মাঠে।
জামাত শুরুর আগে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজাবে রহমত দেশ-বিদেশ থেকে আগত মুসল্লিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। গত এক মাস আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ত্যাগের জন্য কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। দেশবাসীর জন্য দোয়া করার আহ্বান জানানো হয়। সমাগত মুসল্লিদের উদ্দেশে শান্তিপূর্ণ ঈদ জামাত আয়োজনে সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান। সেই সঙ্গে সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান।
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজাবে রহমত বলেন, আপনারা দেখতে পাচ্ছেন লাখ লাখ মুসল্লি ঈদের জামাতে অংশ নিতে এসেছেন। তাঁদের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পর্যাপ্তসংখ্যক সেনাবাহিনীর সদস্য, র্যাব সদস্য ও পাঁচ প্লাটুন বিজিবি সদস্য এবং এপিবিএন মোতায়েন ছিল। এ ছাড়া আনসার সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছেন। ছিল ফায়ার সার্ভিসেরও বেশ কয়েকটি ইউনিট। দায়িত্ব পালন করেছেন ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। গোয়েন্দা নজরদারি ছিল। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ঈদের জামাত আদায় করেছি।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে মুসল্লিদের জন্য পাঁচ স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। মুসল্লিদের নিরাপত্তায় ছিলেন ১ হাজার ১০০ পুলিশ সদস্য। এর মধ্যে পোশাকে, সাদা পোশাকে ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় অফিসার ফোর্স মোতায়েন ছিলেন। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সম্মানিত মুসল্লিরা ঈদের জামাতে অংশ নেন।
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মুকিত সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মো. মাহমুদুল ইসলাম তালুদকদার, র্যাব-১৪ সিপিসি-২ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার মো. আশরাফুল কবির, শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. এরশাদ মিয়া ও কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন।